কক্সবাজার প্রেতিনিধি :: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নেমে থামছে না মৃত্যুর মিছিল। পাশাপাশি বালুচরে সৃষ্টি হয়েছে মরণফাঁদ। যে কারণে সাঁতার না জানা যে কোনো পর্যটক গোসল করতে নামলেই বালুচরের গর্তে বা মরণফাঁদে পড়ে ভেসে যাচ্ছেন।
১৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকার গাজীপুরের তিন বন্ধু গোসলে নেমে মৃত অবস্থায় ভেসে উঠেন। ওই সময় দুই বন্ধুকে গুরুতর অবস্থায় লাইফ গার্ডকর্মীরা উদ্ধার করতে পারলেও গত তিন দিনেও খোঁজ মেলেনি গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফের।
এদিকে পর্যটন মৌসুম কিংবা চলমান বর্ষা মৌসুমেও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অন্তত প্রতিনিয়ত ২০-২৫ হাজার পর্যটকের পদচারণা থাকে। এই পর্যটকদের সিংহভাগই সৈকতের কোনো না কোনো পয়েন্টে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেদের মাতিয়ে রাখেন। যে কারণে প্রায় সময় সাগরে গোসলে নেমে পর্যটক ভেসে যাওয়ার ঘটনা লেগেই থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি সময়ে সৈকতের প্রায় স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের গোসলের স্থানে বড় বড় গর্ত ও মরণফাঁদের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পর্যটকদের জন্য সাগরে গোসলে নামা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ও দক্ষিণ দিকের কলাতলীর নিসর্গ পয়েন্টেও হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম দেখা গেছে। এসব পয়েন্টে সাগরের ঢেউগুলো জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতায় সৈকতে আছড়ে পড়ছে। আর এসব পয়েন্টেই বেশিরভাগ পর্যটক মনের আনন্দে সাগরের লোনাপানিতে গোসলে মেতে উঠেছে। কেউ কেউ টায়ারের টিউবে গা ভাসিয়ে পানিতে ভাসেন, কেউ দ্রুতগতির জেডস্কিতে ছুটেন গভীর জলরাশির দিকে।
আবার কেউ জোয়ারের পানিতে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে গোসলে সময় পার করছেন। বিশেষ করে যারা গোসলে মগ্ন তারা জানে না সাগরের তলদেশে (পানির নিচে বালুচরে) যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মরণফাঁদ লুকিয়ে আছে। আর সেদিকে নজর থাকে না কারও। ফলে যে কোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে বলে মনে করেন লাইফ গার্ডকর্মীরা।
সমুদ্রসৈকতের লাইফ গার্ড মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের সময় গর্তগুলো ডুবে থাকলে পরখ করার উপায় থাকে না। কোমর সমান পানিতে নেমে গোসলের সময় বেখেয়ালে কেউ আটকা পড়লে জীবিত উদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে যেসব পর্যটক গোসলে নামে তাদের বারবার সতর্ক করা হয়ে থাকে। যেন নিরাপদ স্থান থেকে নিজেদের আনন্দ শেষ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের মতে, উত্তাল সমুদ্রে গোসলের মজা আলাদা। কিন্তু এই আলাদা মজা ভোগ করতে গিয়ে সারাজীবনের কান্না ডেকে আনে।
সৈকতের ব্যবসায়ী জাফর আলম জানান, কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। তা ছাড়া বর্তমানে ভাঙন রোধে জিওব্যাগে যেসব বালু ঢুকানো হচ্ছে, তাও রক্ষা বাঁধের কয়েক ফুট কাছ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এই কারণেও দেখতে অনেকটা গুপ্তখালের মতো বড় বড় বিপজ্জনক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সি সেফ লাইফ গার্ডের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে চার কিলোমিটারের এই সৈকত থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩৩ জনের লাশ। এ ছাড়া ভেসে যাওয়ার সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৫৩৬ পর্যটককে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গুপ্তখাল, মরণফাঁদ কিংবা চোরাবালি বলে কিছুই নেই। সাগরে জোয়ারের পানি টান দিলে ভাটার সময় কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়। ওই সময় যদি সাঁতার না জানা কোনো ব্যক্তি পড়ে যায়, তা হলে সে আর কূলে ফিরতে পারে না। বিপদ ঘটে যায়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, জোয়ার শেষে যখন ভাটা হয় তখন কিছু কিছু জায়গায় লেকের মতো সৃষ্টি হয়। এসব জায়গা প্রকৃতপক্ষে বেশি ক্ষতিকর না।
তিনি আরও বলেন, ভাঙন রোধে জিওব্যাগের জন্য যেসব বালু তুলা হচ্ছে তা জোয়ারের পানিতে আবার ভরাট হচ্ছে। সুতরাং কোনো গর্ত স্থায়ী নেই।
পাঠকের মতামত: